জাহিদুল হক মনির,
গারো পাহাড় অধ্যুষিত শেরপুর জেলা। সারাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও সেই তুলনায় খুব একটা উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ঘেঁষা এই জেলায়। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জেলা ব্র্যান্ডিং পর্যটনের উন্নয়ন খাতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চায় শেরপুরবাসী।
শেরপুর জেলা ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, ১ হাজার ৩৬৩ দশমিক ৭৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলায় জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬১০ জন। কোচ, হাজং, বানাই, হদি, গারোসহ নানা জাতিগোষ্ঠির পর্যটন অধুষিত এ জেলার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস কৃষি। জেলা ব্র্যান্ডিং তুলশিমালা সুগন্ধি চালসহ নানা কৃষিপণ্য জেলার বাইরে পাঠাতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাস্তাঘাট, রেলপথ নির্মাণ, শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি এখন গণমানুষের দাবীতে পরিণত হয়েছে। তাই আসন্ন বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে দাবিগুলো বাস্তায়ন করার জোর দাবি জেলাবাসীর।
শেরপুরের অর্থনীতি বহুলাংশে ধানের চাতালের ওপর নির্ভরশীল। জেলার ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য নির্ধারিত হয়েছে সুগন্ধি তুলশিমালা চাল। প্রতি বছরই ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এ জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান রপ্তানি করা হয়। এছাড়া সীমান্তেন গারো পাহাড় ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় প্রচুর সবজি উৎপাদন করে এখানকার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু সারাদেশের সঙ্গে একমাত্র সড়কপথেই এসব পণ্য আনা নেয়ার ফলে অনেক সময়ই সঠিক দাম পায় না এখানকার কৃষকরা। নৌপথের সুযোগ না থাকায় সড়ক পথের পাশাপাশি রেলপথের দাবি এ জেলার মানুষের প্রাণের দাবীতে পরিণত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে জেলা সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি এর কার্যক্রম। আইসিইউ, ইআরটিসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানে ব্যর্থ এ হাসপাতাল। তাই ১৫ লাখ মানুষের সেবা দিতে হিমশিম খায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রতিদিনই অসংখ্য রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হয় পার্শ্ববর্তী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সেবা পেতে স্বাস্থ্য খাতেও বিশেষ বরাদ্দের দাবি শেরপুরের মানুষের।
জেলার ১৫ লাখ মানুষের জন্য একমাত্র শীর্ষ বিদ্যাপীঠ শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। ডিগ্রি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিভাগে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। তাই শেরপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের। ইতোমধ্যে এ দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদানের পরও তেমন কোন সাড়া পায়নি জেলাবাসী।
তাই এবারের বাজেটে শেরপুরের শিক্ষাখাত নিয়ে বিশেষ বরাদ্দ চান স্থানীয়রা।
সংস্কৃতিকর্মী আব্দুল মমিন বলেন, শেরপুরে গারো, কোচ, হদিসহ বিভিন্ন আদিবাসীদের বাস রয়েছে। তাদের সবারই নিজস্ব ভাষা ও সংষ্কৃতি রয়েছে। যা চর্চার অভাবে আধুনিকতার আগ্রাসনে বিলীন হওয়ার পথে। আমাদের সমৃদ্ধ এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে এই জনপদে একটি কালচারাল ভিলেজ স্থাপনের দাবি জানাই।
নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ’র আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘পর্যটন সমৃদ্ধ শেরপুরে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম সড়কপথ। শেরপুরের ব্র্যান্ডিং পর্যটন নিয়ে হলেও পর্যটন খাতে সরকারি বেসরকারি তেমন উদ্যোগ নেই। তাই পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে রেলপথের পাশাপশি পর্যটন খাতে নজর দেয়া জরুরী।’
শেরপুর মডেল গার্লস ডিগ্র কলেজের অধ্যক্ষ তপন সারওয়ার বলেন, ‘গারো পাহাড়ের পাদ দেশে এই শেরপুরে একটি মেডিকেল কলেজ ও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন জরুরী। এবারের বাজেটে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার অনুরোধ করছি।’
সিনিয়র সাংবাদিক ও সমাজকর্মী হাকিম বাবুল বলেন, ‘শেরপুর একটি অনগ্রসর জেলা। আমরা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। রেল লাইন, মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শেরপুরের মানুষের প্রাণের দাবি।
এছাড়া সীমান্তের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য কালচারাল ভিলেজ স্থাপন জরুরী। তাই এবারের বাজেটে যাতে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়, সেই প্রত্যাশা করছি।’
শেরপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান রওশন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে শেরপুরের অনেক উন্নয়ন হলেও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর তুলনায় শেরপুর অনেক পিছিয়ে আছে। ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচের কথা মাথায় রেখে যাতে দ্রæত সময়ের মধ্যে শেরপুরে রেললাইন স্থাপনের দাবি জানাচ্ছি। এ জন্য আসন্ন বাজেটে এই বিষয়ে বিশেষ বরাদ্দ থাকবে বলেও প্রত্যাশা করছি।’
পিছিয়ে পড়া গারো পাহাড়ের এ জনপদকে উন্নত করার লক্ষ্যে জেলার দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা শেরপুরবাসীর।